সবু হোসেন কামাল, ঢাকা প্রতিনিধি : ঢাকার খুব কাছেই সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নে তুরাগ নদীর তীরে এই গোলাপ গ্রাম সাদুল্লাহপুরের অবস্থান। গোলাপের গ্রাম সাদুল্লাহপুর। একটি পর্যটন আকর্ষণ। গ্রামের ভেতর দিয়ে চলে গেছে আঁকাবাঁকা সরু পথ। পথের দুপাশে তাঁকালেই চোখে পড়ে অসংখ্য গোলাপের বাগান। যত দূর চোখ যায়, শুধু লাল গোলাপের সমারোহ। সাদুল্লাহপুরকে গোলাপের গ্রাম বলা হলেও এখানে আর নানা ধরনের ফুল চাষ করা হয়। মাঝে মাঝে কিছু সাদা গোলাপ, জারবেরার বাগানও চোখে পড়ে। পুরো গ্রামটাই নানা রঙের গোলাপ ফুল দিয়ে ঘেরা।
গোলাপের সুগন্ধ আর চোখ জুড়ানো দৃশ্য নিয়ে পুরো গ্রাম সেজে আছে। শুধু সাদুল্লাহপুর নয়, আশপাশের শ্যামপুর, কমলাপুর গ্রামের গোলাপের রাজ্যে চোখ আটকে যাবে যে কারও। গোলাপের সৌন্দর্য দেখতে অনেকেই দল বেঁধে চলে আসেন সাদুল্লাহপুরে।
লাল টকটকে গোলাপ মাথা উঁচিয়ে থাকে। দুপুরের পর থেকেই চাষিরা বাগানে নেমে যান গোলাপ তুলতে। গাছের সারির এক পাশ থেকে ফুল তোলা শুরু করে শেষ পর্যন্ত মুঠো ভরে ফুল তোলেন। চাষিদের ফুল তোলার দৃশ্যও বেশ উপভোগ্য।

তিন বন্ধুকে নিয়ে গত শুক্রবার গোলাপ বাগানে বেড়াতে এসেছিলেন ডিপ্লোমা অধ্যয়নরত ছাত্র রুবেল মাহমুদ। সে ঘুরে দেখতে দেখতে ফুলের বাগানে ঢুকে একসময় নেমে যান ফুল তুলতে। নিজের হাতে বাগান থেকে ফুল তুলতে পেরে বেশ আনন্দিত। রুবেল মাহমুদ বলেন , ‘ঢাকার যান্ত্রিক জীবন থেকে একটু বিশ্রাম ও শারীরিক ক্লান্তি দূর করার জন্য আমরা অনেক জায়গাতেই যাই । তবে সবসময় আর বেশি দূরে যাওয়া সম্ভব হয়ে উঠে না। বন্ধুদের মুখে গোলাপ গ্রামের নাম অনেক শুনেছি। কিন্তু সময়ের জন্য আসা হয়ে উঠেনি। কিন্তু আজ যখন সময় পেলাম, তাই আর সময়টা নষ্ট করলাম না। বন্দূদেরকে নিয়েই ঘুরতে চলে আসলাম। সত্যিই অসাধারণ। যে কারও মনকে মুহূর্তেই মুগ্ধ করে ফেলবে।
এখানকার কোনো কোনো চাষি সকাল সকাল ফুল কেটে নিয়ে যান হাটে, দুপুরের পর সেসব ক্ষেতে তাই পাওয়া যায়না ফুলের দেখা। তবে যেসব ক্ষেতের ফুল কাটা হয় বিকেলে, সেসব জায়গায় খুব সহজেই আপনি উপভোগ করতে পারবেন ক্ষেত ভরা মোহনীয় ফুলের সারি সারি মিলনমেলা। সাদুল্লাপুরের পাশেই শ্যামপুর, এখানে বিকেলবেলায় আপনি উপভোগ করতে পারবেন সারি সারি ফুটন্ত গোলাপ ফুল। কারণ এই শ্যামপুরেই কাসেম মার্কেটে স্থানীয় ফুল চাষরিা নিজেদের প্রয়োজনে গড়ে তুলেছেন হাট। সন্ধ্যায় বসে গোলাপের হাট। তাই এখানকার গোলাপ চাষীরা সকালে ফুল না কেটে সাধারণত বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ফুল কেটে থাকেন। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যাপারীরা এসে ভিড় জমান। রাতে জমে বেচাকেনা। ভোর হওয়ার আগেই গোলাপ গ্রামের ফুল পৌঁছে যায় রাজধানীর বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা ফুল বিক্রির দোকানে। এছাড়া মোস্তফাপাড়ায় রয়েছে সাবু মার্কেট। এখানেও গোলাপ বেচাকেনা হয়।

শ্যামপুর গ্রামের গোলাপচাষি গোপাল চন্দ্র বলেন, সারা বছরই গোলাপ চাষ হয়। এখানকার গ্রামের প্রায় ৯০ ভাগ লোকের পেশা গোলাপ চাষ। বাণিজ্যিকভাবে এখানে প্রথম গোলাপ চাষ শুরু হয় ১৯৯০ সাল থেকে। লাল, নীল, হলুদ, গোলাপী, বেগুনীসহ বিভিন্ন রং আর আকৃতির মোট ৪০ জাতের গোলাপ চাষ হয় এখানে । তবে মিরান্ডা প্রজাতির লাল গোলাপের চাষ হয় বেশি। গোলাপ গ্রামের সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন প্রাণÍ থেকে এখানে ছুটে আসেন প্রকৃতিপ্রেমি ভ্রমণপিপাসু মানুষজন। যারাই ঘুরতে আসেন, কিছু টাকার ফুল কিনে নিয়ে যান।
আরও কয়েকজন গোলাপ চাষীর সাথে কথা বলে জানা যায়, এখানে ফুলচাষীরা সাধারণত পাইকারি ৩ টাকা দরে বিক্রি করে থাকেন প্রতি পিছ ফুল। আপনি চাইলে বেছে বেছে কিছু গোলাপ নিজের জন্যও কিনে আনতে পারেন খুব সসÍায়। তবে এরা ১০০ এর নিচে গোলাপ বিক্রি করতে চায় না।
গোলাপ গ্রাম সাদুল্লাহপুর কিভাবে যাবেন
ট্রলারে সাদুল্লাহপুর যেতে চাইলে গাবতলী, মাজার রোড কিংবা মিরপুর-১ নম্বর গোলচত্বর নেমে রিকশায় দিয়াবাড়ি বটতলা ঘাট যেতে হবে। ঘাট থেকে ৩০ মিনিট পরপর সাদুল্লাাহপুরের উদ্দেশে ট্রলার ছাড়ে। জনপ্রতি ভাড়া ২৫ টাকা। হেঁটেই সাদুল্লাহপুর ও এর আশপাশের গ্রাম ঘোরা যায়।
দিয়াবাড়ি বটতলা ঘাট থেকে ট্রলারে সাদুল্লাহপুর ঘাটে যাওয়ার সময়টুকু মুগ্ধ হওয়ার মতো। নদীর দুই তীরের মনোরম দৃশ্য চোখে প্রশান্তি দেয়। ট্রলারে প্রায় আধা ঘণ্টা লাগে সাদুল্লাহপুর যেতে। আর ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে যেতে চাইলে মিরপুর বেড়িবাঁধ ধরে বিরুলিয়া সেতু হয়ে সোজা গেলে আকরান বাজার। বাজার থেকে বাঁয়ের পথ ধরে এগোলেই দেখা মিলবে গোলাপ রাজ্যের।
কোথায় খাবেন
সাদুল্লাহপুর ঘাটে বেশ কিছু দোকানপাট ও দুটি খাবার হোটেল আছে মোটামুটি মানের। সেখানে ভাত, ভর্তা, সবজি, ছোট মাছ ইত্যাদি পাওয়া যায়। ঘাটের মিষ্টির দোকান দই, মিষ্টিসহ গরুর দুধের চা পাওয়া যায়। গ্রামে ঘোরা শেষে অনেকেই মুঠো ভরে তাজা গোলাপ কেনেন। গোলাপ গ্রামের কিছুটা সৌরভমাখা স্মৃতি নিয়ে ফিরে আসেন কর্মব্যস্ত শহরে জীবনে। যাঁরা প্রকৃতির সান্নিধ্য ভালোবাসেন, যান্ত্রিক জীবনের ক্লান্তি দূর করতে একটু সময় বের করে ঘুরে আসতে পারেন লাল গোলাপের গ্রামে।